- Advertisement -
কুরআন মাজীদে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে- “আল্লাহ তায়ালা নিজ অনুগ্রহে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত কিছু মানুষের অধীন করে দিয়েছেন”{সূরা জাসিয়াহ: আয়াত-১৩}। জীবন নির্বাহের উপকরণসমূহ সংগ্রহ এবং সদ্ব্যবহার করার জন্য আল্লাহ আমাদের আদেশ করেছেন। কুরআন মাজীদে এ প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে-“নামাজ শেষ হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অন্বেষণ কর এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর- যাতে তোমরা সফলকাম হও” {সূরা জুমায়াহ: আয়াত-১০}। জীবিকার অন্বেষণে মহানবী (সা.) তার সাহাবীগণকে বিশেষ তাগিদ দিতেন। তিনি বলেছেন-“জীবন নির্বাহের জন্য বৈধ পন্থায় জীবিকা অন্বেষণ করা ফরয বন্দেগীর পাশাপাশি অন্য একটি ফরয” {বায়হাকী}। তিনি আরও বলেছেন-“কিছু অপরাধ আছে যা একমাত্র জীবিকা অন্বেষণের প্রচেষ্টার দ্বারাই ক্ষমা করা হয়ে থাকে” {এহইয়াউ উলূমিদ্দীন}। ইসলামের দৃষ্টিতে ফসল উৎপাদন, গৃহপালিত পশুপাখি লালন পালন, মাছচাষ ও বনায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল কাজ।
মহান আল্লাহতায়ালা পৃথিবীর উপরিভাগকে উৎপাদন ক্ষমতা দিয়েছেন। চাষাবাদ যোগ্য করেছেন। যাতে মানুষ কৃষি কাজের মাধ্যমে তাদের জীবিকা অর্জন করতে পারে। এ প্রসঙ্গে কুরআন মাজীদে ঘোষিত হয়েছে-“আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য জমিনকে চাষাবাদ ও অন্যান্য ব্যবহারের উপযোগী করে দিয়েছেন”{সূরা মূলক: আয়াত ১৫}। নবীজী ফসল উৎপাদনে লোকদেরকে উৎসাহিত করার জন্য খাস পতিত জমির ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছিলেন-“পতিত ভূমির আবাদকারীই উক্ত ভূমির মালিক হবে”{মিশকাত}। পাশাপাশি মালিকাধীন ভূমি যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, সে জন্য তিনি বলেছেন- “যার এক খন্ড জমি রয়েছে, তার উচিত উহা আবাদ করা। যদি সে নিজে আবাদ করতে না পারে তাহলে সে যেন উহা তার ভাইকে (অন্য কাউকে) দান করে। যাতে সে তা আবাদ করে ভোগ করতে পারে”{মুসলিম}। মহানবী (সা.) জীবিকা অন্বেষণে নিয়োজিত শ্রমকে উত্তম ইবাদত বলেছেন ।
সুস্বাদু ফল ফলাদি-জ্বালানি ও গৃহ সামগ্রী তৈরিতে গাছের তথা বনায়নের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশের ভারসাম্য বজায়, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার অন্যতম হাতিয়ার বনায়ন। মহানবী (সা.) বৃক্ষ রোপণের জন্য সাহাবীগণকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি নিজেও বাগানে কাজ করেছেন। তিনি বৃক্ষ রোপণ ও ফসল বপনকে সাদাকায়ে জারিয়ার কাজ বলেছেন।“কোনো মুসলমান বৃক্ষ রোপণ অথবা শস্য বপন করলে যদি তা থেকে কোনো মানুষ, পাখি অথবা পশু কিছু আহার করে তবে তা তার জন্য সাদাকাস্বরুপ হবে”{বুখারী, মুসলিম}। বৃক্ষরাজি, তরু লতা ও উদ্ভিদসমূহ আল্লাহ তায়ালার নেয়ামত। আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে এবং জমিনকে বিদীর্ণ করে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এগুলো সৃষ্টি করেছেন। খাবার, ফলমূল, পশুর খাদ্য ইত্যাদি আমরা বিভিন্ন গাছ-গাছালি থেকে পেয়ে থাকি। এ সম্পর্কে কোরআন মাজীদে উল্লেখিত আছে- “তিনি আমাদের জন্য বৃষ্টির দ্বারা জন্মান শস্য, জয়তুন খেজুর বৃক্ষ এবং সর্ব প্রকার ফল। অবশ্যই এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শন রয়েছে” {সূরা নাহল:আয়াত-১১}।
“তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তা থেকে উৎপন্ন কর, না আমি উৎপন্নকারীঃ ইচ্ছা করলে, আমি উহা খরকুটা করে দিতে পারি। অতঃপর তোমরা হয়ে যাবে হতভম্ব” {সূরা ওয়াক্বিয়া, আয়াত-৬৩-৬৫}। পৃথিবীতে আল্লাহ তায়ালার যত নবী রাসূল পাঠিয়েছেন তারা সবাই কৃষিকাজ করেছেন। ইসলাম কৃষিকাজকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। জীবিকার্জনের উপকরণ উপাদানসমূহ সদ্ব্যবহার করে মানুষ তা ভোগ করবে এটাই আল্লাহর হুকুম। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন: “হে ঈমানদারগণ। আমি যে সব পবিত্র জিনিস তোমাদের জন্য রেখেছি তা হতে ভোগ কর”{সূরা বাকারা: আয়াত-১৭২}। জীবিকার্জনের বৈধ পেশা অবলম্বন করা প্রসঙ্গে মহানবী সা. বলেছেন- “অন্যান্য ফরযের পর নিজ রুযী অন্বেষণ করাও একটি ফরয” {মিশকাত}। মহানবি সা. বলেছেন- “সব সময় নিজের কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা কর। তোমার উপর এটা আল্লাহর আদেশ” {মসনাদ আহমদ}।
শ্রম ও উন্নত কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা কৃষিতে বিপ্লব ঘটাতে পারি। ফলে দারিদ্রতা দূর করে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা অর্জন করতে পারব। এতে সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। কুরআন মাজীদে এ দিকটির প্রতি সুষ্পষ্ট ইঙ্গিত করে আল্লাহ পাক বলেন-“মানুষ তাই(সামাজিক মর্যাদা) পাবার জন্য সে শ্রম করে”{সূরা নাজম, আয়াত-৩৯}। “নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক কোনো জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে”{সূরা আর-রাআদ, আয়াত ১১}। মহানবী (সা.) এই প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত বলেছেন- নিজের জীবিকা অর্জনের জন্য সকল প্রচেষ্টা পরিত্যাগ করে জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সবকিছু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা কারও পক্ষেই সংগত নয়। বরং জীবিকা অর্জনের জন্য সকলকেই তার সাধ্যনুযায়ী পরিশ্রম করতে হবে। কেননা তোমরা জানো, আকাশ থেকে সোনারুপা বর্ষিত হয় না {আল মাদীনাত ওয়াল ইসলাম}। তিরমিযী গ্রন্থে হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা বলেন, জমির লুক্কায়িত ভান্ডারে খাদ্য অনুসন্ধান কর। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগৎ নিয়েই মানুষ ও মানুষের জীবন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে-“দুনিয়া হচ্ছে আখিরাতের কৃষিক্ষেত্র”।
সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবারের জন্য গৃহপালিত পশুপাখি লালনপালন করা। কৃষি কাজে সহায়তা, পরিবহন, চলাচলের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা। চামড়া, পশম, হাড় ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তৈরির কাজে লাগে। তাই কুরআন মাজীদ ও হাদীসে পশুপালন এর ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা ও উপকারিতার কথা বহুস্থানে বলা হয়েছে। যেমন- “তিনি পশুকুল সৃষ্টি করেছেন। এগুলোতে রয়েছে তোমাদের জন্য শীত নিবারক উপকরণ ও উপকার। আর তা থেকে তোমরা আহার্য পেয়ে থাক”{সুরা আল নাহল-আয়াত-৫}। মহানবী (স) বলেছেন, মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য প্রাণিজ আমিষের প্রয়োজন। আর পশু-পাখি এর উৎস। রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তোমরা ভেড়া, বকরি পালন কর। কারণ এরা সকাল সন্ধ্যা তোমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। তিনি আরোও বলেছেন, আল্লাহ পৃথিবীতে এমন কোনো নবী পাঠাননি যিনি মেষ বা ছাগল চরাননি। রাসূল সা. নিজেও মেষ চরিয়েছেন। মাছ আমাদের প্রিয় খাদ্য। কুরআন মাজীদে বর্ণিত আছে- “তিনি জলরাশিতে অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তা থেকে তোমরা তাজা মাছ আহার করতে পার” {সুরা নাহল-আয়াত-১৪}।
কৃষি কাজের সুফলতা নির্ভর করে সঠিকভাবে পরিচর্যা এবং উৎপাদিত ফসলের যথাযথ সংরক্ষণ এর মাধ্যমে। কুরআন ও হাদীস শরীফে ফসলের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ করার ব্যাপারে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অযত্ন বা অবহেলা করা অথবা কোনোরুপ অনিষ্ট করা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে- “তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা হতে খাও এবং পান কর। কিন্তু বিনষ্টকারীদের ন্যায় পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না” {সুরা-বাকারা: আয়াত-৬০}। মহানবী (সা.) প্রাণিজগত সৃষ্টিকে কষ্ট দেওয়ার ব্যাপারে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করার হুশিয়ারি প্রদান করেছেন। অকারণে গাছ কেটে ফেলা, এমনকি একটি পাতা ছিড়া থেকে নিষেধ করেছেন। হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে- “ নবী করিম (সা:) সম্পদ নষ্ট কতে নিষেধ করেছেন” {বোখারী ও মুসলিম}। অপচয় করা প্রকৃতপক্ষে জাতীয় ক্ষতি। যাহা অত্যন্ত গর্হিত ও গুনাহের কাজ। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে- “তোমরা কোনোরুপ অপচয় করো না। নিশ্চয়ই অপচয়কারী শয়তানের ভাই” {সুরা বনী ইসরাইল: আয়াত-২৬-২৭}
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। জীবনধারণের কর্মের মাঝেই আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত পেতে পারি। অফুরন্ত নেয়ামতগুলোর সদ্ব্যবহার করে সুখী, সমৃদ্ধশালী জাতি গঠনে সবাই অংশগ্রহন করতে পারি। সময়ে সময়ে শুকরিয়া আদায় করা উচিত। কুরআন মাজীদে বলেছেন- “ যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে অবশ্যই আমি তোমাদের সম্পদ বাড়িয়ে দেব” {সুরা-ইবরাহীম: আয়াত-৭}। শুকরিয়া জানানোও একটি নৈতিক দায়িত্ব। শুকরিয়া জানাই কবি কাজী নজরুলের অমর বানীকে স্মরন করে-
এই সুন্দর ফুল, সুন্দর ফল
মিঠা নদীর পানি, খোদা তোমার মেহেরবানী।
- Advertisement -