- Advertisement -

আলোক ফাঁদ: পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তি

সবুজ কৃষি প্রযুক্তি: আলোক ফাঁদ

0 3,813

- Advertisement -

 

আলোক ফাঁদ

আলো সংবেদনশীল বা আকৃষ্ট হয় এমন পোকাকে আকৃষ্ট করাকে লাইট ট্র্যাপ বা আলোক ফাঁদ বলে। এটি ফসলের মাঠে পোকামাকড়ের উপস্থিতি যাচাই এবং নিয়ন্ত্রণ করার একটি পরিবেশবান্ধব কৌশল। আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পোকামাকড় উড়ে এসে আলোর উৎসের চারপাশে ঘোরাঘুরি করে। এক পর্যায়ে নিচে ডিটারজেন্ট ও কেরোসিন মিশ্রিত পানির পাত্রে পরে যায়। পানির পাত্রের পরিবর্তে আঠা মিশ্রিত সাদা বা রঙ্গিন শক্ত কাগজও ব্যবহার করা যেতে পারে।

আলোক ফাঁদ এর উদ্দেশ্য

আলোক ফাঁদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো পোকার উপস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা। পোকার উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে বালাই ব্যবস্থাপনা নেয়া। ক্ষতিকর পোকার বংশ বিস্তার কমিয়ে আনা। এতে ক্ষতিকর পোকা নিয়ন্ত্রণের একটা মোক্ষম উপায়। সুনির্দিষ্ট পোকা কেন্দ্রিক সঠিক বালাই ব্যবস্থাপনা করা। এতে কীটনাশক ব্যবহার কমানো যায়। ফলে খরচ কমার সাথে পরিবেশের ক্ষতি কম হয়। সর্বোপরি জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পায়।

আলোক ফাঁদ স্থাপনের উপকরণসমূহ

আলোর উৎস হিসেবে হারিকেন, হ্যাজাক বাতি বা ফ্লোরোসেন্ট লাইট। সাধারন বাল্বও ব্যবহার করা যায়। বাঁশের তিনটি খুঁটি। একটি ডিশ বা গামলা। সামান্য পরিমাণ ডিটারজেন্ট পাউডার ও অল্প পরিমাণ কেরোসিন। পরিকল্পিত উপায়ে রড দ্বারা স্থায়ীভাবে আলোক ফাঁদ তৈরি করা যায়।

আলোক ফাঁদ স্থাপনের কৌশল

ত্রিকোণাকার করে তিনটি খুঁটি মাটিতে স্থাপন করতে হবে। খুঁটি তিনটি উপরের অংশ একই পয়েন্ট বা জায়গায় ভালোভাবে আটকিয়ে দিতে হবে। খুঁটি তিনটির মিলিত জায়গা থেকে লাইট বা আলোর উৎসটি আটকাতে হবে। লাইট বা আলোক ফাঁদের আলোর উৎসটি ফসলের ক্যানোপি বা উপরি অংশ থেকে ২ থেকে ৩ ফুট উপরে থাকতে হবে। ডিটারজেন্ট ও কেরোসিন মিশ্রিত পানির পাত্র বা গামলাটি আলোর উৎসের নিচে বসাতে হবে। একটু ফেনা উঠা পরিমাণ ডিটারজেন্ট হলেই চলবে। আর এক বা দুই ফোঁটা কেরোসিন দিলেই হবে। এভাবেই আলোক ফাঁদ তৈরি করতে হবে।

আলোক ফাঁদ স্থাপনের সময় ও স্থান

ফসলি জমি বা ফসল থেকে একটু দূরে আলোক ফাঁদ বসাতে হবে। এক্ষেত্রে ৫০ মিটার থেকে ২০০ মিটার এর মধ্যে স্থাপন করা ভালো। সাধারণত জমির ভিতরে আলোক ফাঁদ স্থাপন করতে নেই। তবে ফাঁদ বসানোর মত কোন জায়গা না থাকলে জমির ভিতরে স্থাপন করা যাবে। মনে রাখতে হবে, ঐ দিনই ফাঁদের কাছাকাছি জায়গায় উপযুক্ত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ঠিক সূর্যাস্থের আধা ঘন্টা পর থেকে পরবর্তী ২ থেকে ৩ ঘন্টা এর মধ্যে আলোক ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। আলোক ফাঁদ কমপক্ষে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত রাখতে হবে। জমিতে পোকামাকড়ের উপস্থিতি ও তীব্রতার উপর আলোক ফাঁদ স্থাপন নির্ভর করে। পোকা মাকড় বেশি হলে প্রতিদিন ব্যবহার করা ভালো। তবে মাঠে সকল কৃষক ভাইয়েরা মিলে একই সাথে ফাঁদ স্থাপন করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়।

যে সব পোকা আলোক ফাঁদের প্রতি আকৃষ্ট হয়

পূর্ণাঙ্গ পোকারাই আলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়। আলোক ফাঁদে ক্ষতিকর পোকার মথ যেমন মাজরা পোকা, চুঙ্গি পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, বিছা পোকা, সোর্য়ামিং ক্যাটারপিলার গুলো আসে। তাছাড়া নলি মাছি, বাদামী গাছ ফড়িং, সাদা পীট গাছ ফড়িং, গ্রিন লিফ হোপার (সবুজ পাতা ফড়িং), হোয়াইট লিফ হোপার (সাদা পাতা ফড়িং), গান্ধি পোকা এসব পোকা আলোক ফাঁদ দ্বারা দমন করা যায়।

পোকা মাকড় ফসলের মারাত্নক ক্ষতি করে। তাই বলে বোকার মতো আন্দাজী কীটনাশক ব্যবহার করলে চলবে না। কথায় আছে, বোকার ফসল পোকায় খায়, এমন হলেও চলবে না।  বরং সমকালীন চাষাবাদ, ক্লাব গঠন, সমিতি গঠন এমনকি সমবায় ভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণ করে বালাই দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে। সময়ের সাথে কৃষির উপকরণ, শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কৃষির উৎপাদন খরচও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। অবিবেচকের মত বালাইনাশক ব্যবহার খরচকে আরোও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। অজৈব বা রাসায়নিক কৃষি ব্যবস্থা মাঠে খুব দ্রুত কাজ করে। কিন্তু নীরভে ফসল, পরিবেশ এমনকি জীব বৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে। সবুজ কৃষি প্রযুক্তিগুলো মাঠ ফসলে আস্তে আস্তে কাজ করলেও ইহা পরিবেশবান্ধব এবং স্থায়িত্বশীল। তাই সবাইকে সবুজ কৃষি প্রযুক্তি  আলোক ফাঁদসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগুলো মাঠে বাস্তবায়ন করতে হবে। তবেই আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে ও বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করতে পারব।

 

- Advertisement -

উত্তর দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.