- Advertisement -

কোরবানির পশু: সুস্থ পশু চেনার উপায়

কোরবানির পশু: সুস্থ পশু চেনার উপায়

312

- Advertisement -

কোরবানির পশু: সুস্থ পশু চেনার উপায়

কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ

মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন, নৈকট্য লাভ ও ত্যাগের শিক্ষা প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রিয়বস্তু বা প্রিয়প্রাণি উৎসর্গের নামই কোরবানি। শরিয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে কোরবানি বলে (শামি ৫ম খন্ড)। ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক ছয় ধরনের পশু দ্বারা কোরবানি আদায় করার তাগিদ রয়েছে। এগুলো হলো ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ এবং উট। সুন্দর, আকর্ষণীয়,  প্রিয় ও অতি পছন্দনীয় পশু কোরবানির মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জন করা যায়।

কোরবানির পশু নির্বাচন বিষয়ক কিছু অবতারণা

প্রথমেই পশুদের বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে ইসলামি শরিয়াতে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার জন্য কমপক্ষে এক বছর; গরু ও মহিষের জন্য নুন্যতম দুই বছর এবং উটের বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। তাছাড়া কোরবানির পশুগুলো হতে হবে যথাসম্ভব দোষ ও ক্রুটিমুক্ত। এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলো হলো- সাধারণত মধ্যম বয়সী, উজ্জ্বল গাঢ় বর্ণের, আকর্ষণীয় ও দর্শকনন্দিত, পরিশ্রান্ত বা ক্লান্ত না হওয়া এবং সুস্থ ও নিঁখুত হতে হবে। এ ব্যাপারে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স:) বলেছেন স্পষ্টত অন্ধ, মারাত্নক অসুস্থ, দুর্বল হাড্ডিসার এবং চারপায়ে চলতে অক্ষম বা খোঁড়া এমন পশু কোরবানি করা যাবে না। পবিত্র হাদিসে ত্রুটিমুক্ত পশু প্রসঙ্গে বিস্তারিত ধারনা পাওয়া যায়। আলোচনার উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো- দু’চোখ বা এক চোখ এক তৃতীয়াংশের বেশি অন্ধ পশু কোরবানি চলবে না, তিন পায়ে চলে বা চার পায়ে ভর দিতে পারে না এমন পশু কোরবানি করা বৈধ নয়, পশুর কান বা লেজ এক তৃতীয়াংশের বেশি কাটা থাকলে কোরবানি হবে না, মজ্জা শুকিয়ে গেছে এমন হাড্ডিসার পশুতে কোরবানি হবে না, শিং উঠেইনি অথবা শিং অগ্রভাগ বা সামান্য ভাঙ্গা হলে চলবে তবে শিং যদি মূল থেকে ভেঙ্গে থাকে তাতেও কোরবানি শুদ্ধ হবে না,  যেসব পশুর চামড়া-পশম নষ্ট বা চর্মরোগের কারণে গোশত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন পশু  কোরবানি করা যাবে না। ইবাদত ক্রটিমুক্ত হওয়া জরুরি। কোরবানি একটি উচ্চমর্যাদার ইবাদত।

কোরবানির জন্য সুস্থ পশু চেনার উপায়

কোরবানির জন্য বয়সের ব্যাপারটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। সুস্থ পশু চেনার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য হলো মাথা তথা শিরদাড়া উঁচু, কান খাঁড়া, শরীর টানটান থাকবে। পশুগুলোর মধ্যে প্রাণোচ্ছ্বল ও প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ চটপটে ভাব থাকবে, দ্রত হাঁটাচলা ও স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করবে। ভারি আওয়াজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকবে এমনকি গুঁতো দিতেও উদ্যত হবে। পশুর মুখের সামনে কিছু খাবার বা ঘাস দিলে নিজ থেকেই জিব দিয়ে টেনে নিয়ে খাবার খেতে থাকে তাহলে পশুটি সুুস্থ। সুস্থ সবল পশুরা লেজ নাড়িয়ে শরীরের মাছি তাড়ায়। এক স্থানে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে চায় না, কান নাড়াচাড়া করে, পশুর কাছে গেলে অনেক সময় গুতা দেওয়ার চেষ্টা করে, সুস্থ পশুর নাকের উপরটা ভেজা ভেজা থাকে। সুস্থ পশু বিশেষ করে গরুর ক্ষেত্রে পিঠের কুঁজ/গজ মোটা ও টান টান হয়ে থাকে।  তবে মোটাতাজা পশু মানেই সুস্থ এমনটা নয় বরং বেশি মোটাতাজা পশুতে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে যা পরবর্তীতে মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কোরবানির পশু কেনার আগে পশুর শরীরের কোথাও ক্ষত আছে কিনা ভালোভাবে পরীক্ষা করে নিন। বিশেষ করে শিং ভাঙ্গা আছে কিনা, লেজ, মুখ, দাঁত, খুর এসব কিছুই পরীক্ষা করে দেখুন, কোন ত্রুটি চোখে পড়ে কিনা। অন্যদিকে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকা, ঝিমানো, চোখের পাতা সাদাটে বর্ণের, মোটাতাজা পশুর শরীরে হাতের আঙ্গুলে চাপ দিলে ডেবে যাওয়া ও পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে যথেষ্ট সময় লাগলে এসব পশু না কেনার পরামর্শ রইল। তবে পশু কেনার সময় ওজনে ভারি, ফোলা ও চর্বিজাতীয় পশু না কেনাই উচিত।

সুস্থ, সুন্দর, সবল, আকর্ষনীয়, চটপটে পশুটি কোরবানির জন্য নির্বাচন করুন। বেশি দামের জৌলুস ও অহমিকায় নয় বরং নৈতিক মননশীলতার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভই হউক আপনার কোরবানির মূল লক্ষ্য।

- Advertisement -

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.