- Advertisement -

বাড়ির উঠোন যখন শক্তিশালী শিল্প এলাকা

সবজির চারা উৎপাদন

260

- Advertisement -

 

কৃষিতে বারহাট্টা…
চারিদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ ধানক্ষেত, তারই মাঝে একটু ভিন্নতা। দিগন্তের দিকে কংশ নদীর তীরঘেষে ছোট্ট একটা গ্রাম। নাম তার শালনগর। নামটিতেই খুব বেশি মায়া…আপন আপন মনে হয়,  আপন হবেই বা না কেন? যে গ্রামের মানুষেরা পুষ্টিনগর তৈরির কর্মযজ্ঞে ব্রত। প্রতিটা বাড়ির উঠোন, আঙ্গিনায় বাহারি রকমের সবজির চারায় জানান দিচ্ছে এ যেন সবুজের মাঝে চিরন্তন সবুজ। বাড়ির উঠোন, আঙ্গিনাও যে কৃষি ইন্ড্রাস্ট্রিজ বা কৃষি শিল্প এলাকা হতে পারে তা দুনয়নে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। বলছি বারহাট্টার সাহতা ইউনিয়নের শালনগর গ্রামের একদল উদ্যোমী, পরিশ্রমী ও পুষ্টি কারিগরের কথা। যারা অতি যত্নে সবজির চারা উৎপাদন করে ছড়িয়ে দিচ্ছেন বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ, ধর্মপাশা, আটপাড়া, সদর, কলমাকান্দা, দুর্গাপুরসহ দেশের নানাবিধ জায়গায়।

উদ্যোগটি গত ১৪-১৫ বছর পূর্বে ছোট করেই শুরু করেছিলেন কয়েকজন উদ্যোমী কৃষক। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ইফাদ প্রকল্প, নেত্রকোণা ভিত্তিক স্থানীয় প্রকল্প ও অন্যান্য প্রকল্পের সমন্বয়ে বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের সবজি চাষে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে সবজির বীজ, চারা ও সবজি উৎপাদন প্রদর্শণী, প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। উৎসাহিত কৃষক নিজেদের আর্থ সামাজিক অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে শুরু করে দেন সবজির চারা উৎপাদন। দিনে দিনে কলেবরে তা আজ রীতিমতো কৃষি শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকার সবজির চারা উৎপাদন করা হয়। এসব চারা থেকে পরবর্তীতে কোটি কোটি টাকার সবজি উৎপাদন করে দেশ বিদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছেন পার্শ্ববর্তী কৃষকরা। নি:সন্দেহে বলা যায়, দেশের পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে শালনগর গ্রামের সবজি চারা উৎপাদকরা শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছেন। সবজির চারা উৎপাদনে শালনগর গ্রামের ইন্জিল মিয়া, আলামিন, বাবুল মিয়া, সিদ্দিক মিয়া, আব্দুল মালেক, জামাল মিয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। শালনগর গ্রামটি ঘুরে দেখা গেল, ৩০-৩৫ টি বাড়িতে তাদের উঠোন, আঙ্গিনা এখন সবজির চারা উৎপাদন কারখানা। বাহারি রকমের সবজির চারা যেমন বেগুন, টমেটো, মরিচ, ফুলকপি, বাধাকপি এসব। আরোও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, বাড়ির আঙ্গিনায় হওয়ার ঘরের মা, চাচি ও কন্যারা সহজেই চারার পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা করতে পারছে। তারা  একটি সুনির্দিষ্ট কাজের সুযোগ তৈরি করেছে। ফলে তাদের আর্থসামাজিক উন্নতি হচ্ছে। পাশাপাশি তারা নিজেরাও সবজি আবাদ করছে, নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি সবজি বিক্রি করেও কিছু আয় বাড়াতে পারছে।

মাঠপর্যায়ে কর্মরত উপসহকারী কৃষি অফিসার জনাব আশিষ কুমার রায়ের ভূমিকা সবজির পরতে পরতে খুঁজে যায়। নিয়মিত তদারকি, পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শতো আছেই।

উল্লেখ্য যে, বারহাট্টা উপজেলার কৃষকেরা শুধুই ধান চাষে অভ্যস্থ। শাকসবজি,ফলমূল আবাদে এখনো অনেক পিছিয়ে, তবে শালনগর গ্রাম ভিন্নতার প্রতীক হয়ে বারহাট্টায় আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট একটি প্রযুক্তিকে শিল্পে রুপান্তরিত করেছে। তাই তাদের প্রতি আন্তরিক মোবারকবাদ ও গভীর শ্রদ্ধা।

২১ অক্টোবর, ২০১৯ বিকেলে শালনগর গ্রামটি পরিদর্শনে যাই, সাথে এইও বানিন রায়, এসএএও আশিষ বাবু সহ সংগ্রামী কৃষকগণ আমাদের স্বাগত জানান, অত:পর ঘুরে ঘুরে সবজির চারা উৎপাদন কারখানাগুলো দেখিয়েছেন। মনের মধ্যে কেমন যেন মোচড় দিয়ে, বার বার আন্দোলিত করছিল সফল যারা কেমন তারা, তাদের মুখগুলো আমরা দেখছিলাম।

বিকেলের শেষ আলোয় সংগ্রামী মানুষগুলোর মুখে সূর্যের আভায় সোনালী স্বপ্নগুলো ঝলঝল করছিল, আর আমি ভাবছিলাম উনারাই সোনার দেশের সোনার মানুষ।

কৃষিবিদ মোহাইমিন….

 

- Advertisement -

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.