- Advertisement -

জমিবিহীন নিরাপদ ফসল মাশরুম

439

- Advertisement -

 

মাশরুম চাষ ও গুরুত্ব

মাশরুম এক ধরনের নিম্ন শ্রেণীর পরজীবি ছত্রাক। টিস্যুকালচারের মাধ্যমে উদ্ভাবিত বীজ দ্বারা পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে চাষ করা সুস্বাদু পুষ্টিকর এবং বহু ঔষধীগুণ সম্পন্ন সব্জী মাশরুম, যা সম্পূর্ণ হালাল।

মাশরুম চাষে আবাদী জমির প্রয়োজন হয় না, ঘরের মধ্যে চাষ করা যায়, তাকে তাকে সাজিয়ে একটি ঘরকে কয়েকটি ঘরের সমান ব্যবহার করা যায় এবং খুব অল্প সময়ে অর্থাৎ মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে মাশরুম পাওয়া যায় যা বিশ্বে আর কোন ফসলের বেলায় প্রযোজ্য নয়। মাশরুম চাষ একটি সর্বোত্তম লাভজনক ব্যবসা।  মাশরুম চাষ করে আমাদের দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানী করে কোটি কোটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়ন করা সম্ভব।

মাশরুম চাষের কলাকৌশল

ল্যাবরেটরীতে টিস্যু কালচারের মাধ্যমে মাশরুমের বীজ উৎপাদন করা হয়। সেখান থেকে মাদার কালচার বা বানিজ্যিক বীজ সংগ্রহ করে খুব সহজেই মাশরুম চাষ করা যায়। মৌসুমের উপর ভিত্তি করে মাশরুম কে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন এবং সারা বৎসর চাষ করা যায় এ ধরনের মাশরুম । সারাবৎসর যে মাশরুম চাষ করা যায় তার নাম ওয়েস্টার মাশরুম । ওয়েস্টার মাশরুম ১৫-৩০০ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাল জন্মে। যে ঘরে মাশরুম চাষ হবে সে ঘরটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, সেমি পাকা বা পাকা মেঝযুক্ত এবং যাতে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে এ ধরনের ঘর হতে হবে।

মাশরুম চাষের ঘর তৈরির জন্য ৫টি বিষয়কে মূলনীতি হিসেবে ধরা হয়।

অক্সিজেনের উপস্থিতি ছত্রাক মূলত: কাঁঠের গুড়া থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। মাশরুম ফুল উৎপাদনের সময় প্রচুর পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন হয়। সে সময় কাঁঠের গুড়া অক্সিজেনের উপস্থিতিতে জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য সহজলভ্য করে। তাই প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় বিধায় অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আলো মাশরুম চাষের ঘরটি আবছা অন্ধকার হতে হবে। অর্থাৎ খালি চোখে খবরের কাগজ পড়া যায় এমণ আলো থাকতে হবে।
তাপমাত্রা- মাশরুম যে ঘরে চাষ করা হবে সে ঘরের তাপমাত্র ১৫-৩০০ সেলসিয়াস এর মধ্যে রাখতে হবে। এর জন্য ঘরের চালা ছনের হলে ভাল তবে টিনের হলে সিলিং এর ব্যবস্থা রাখতে হবে। এ ছাড়াও ঘরটি গাছের নীচে হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব হয়।
আর্দ্রতা মাশরুম চাষের ঘরটির আদ্রতা ৪০-৪৫ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে।

কার্বণ-ডাই-অক্সাইড মুক্ত পরিবেশ  অক্সিজেন কাঁঠের গুড়াকে জারিত করে খাদ্য উৎপাদনের সময় প্রচুর পরিমাণে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে। এ কারণে এর ফুল উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি হয়। বাতাস থেকে কার্বণ-ডাই-অক্সাইড ভারী বলে ঘরের নীচের অংশে বাতাস চলাচল ছাড়া বের হতে চায় না। এ জন্য ঘরের নীচের অংশে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আমাদের দেশে নানা ধরনের মাশরুম চাষ হয়ে থাকে। অন্যতম জাতগুলো হলো- ওয়েস্টার মাশরুম যা সারা বৎসর চাষ করা যায়। শীতাকে ও বুতাম মাশরুম যা শীতকালে চাষ করা যায়। স্ট্র, মিল্কি ও ঋষি বা ঔষধী মাশরুম যা গ্রীষ্মকালে চাষ করা যায়।

মাশরুম চাষ পদ্ধতি-
বীজ সংগ্রহের পর স্পোন প্যাকেটের কোণাযুক্ত দুই পাশের ঘাড় বরাবর বেশি উপরে বা বেশি নীচে না এমন যায়গায় অর্ধচন্দ্র বা ইংরেজী উ অক্ষরের মত করে কেটে কিছু অংশ চেছে য়েলে দিতে হবে। এতে প্যাকেটের ভিতরের মাশরুমের মাইসেলিয়াম উত্তেজিত হয়। কাটা প্যাকেটকে ৫ মিনিট পানিতে চুবিয়ে পানি ঝরিয়ে বা কাটার পর সরাসরি চাষ ঘরের মেঝে বা তাকের মধ্যে সাজিয়ে রেখে চাষ করা যায়। তার পর চাষ ঘরের আদ্রতা ঠিক রাখার জন্য দিনে ২-৩ বার বা প্রয়োজনে কমবেশি পানি স্প্রে মেশিন দিয়ে বা অন্য যে কোন উপায়ে স্প্রে করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন প্যাকেট ও আশেপাশে ভিজে কিন্তু পানি জমে না থাকে। ২-৩ দিনের মধ্যে মাশরুমের অংকুর পিনের মাথার মত বের হবে। ৫-৭ দিনের মধ্যে মাশরুম তোলার উপযোগী হয়। প্রথম বার মাশরুম তোলার পর প্যাকেট ১ দিন বিশ্রাম অবস্থায় রাখতে হবে এবং পরের দিন কাটা অংশ পুনরায় চামচ দিয়ে চেছে আবার পানি স্প্রে করতে হবে। ১০-১৫ দিন পর পুনরায় মাশরুম সংগ্রহ করা যাবে। এ ভাবে ১ টি প্যাকেট থেকে ৭-৮ বার মাশরুম সংগ্রহ করা যায়।

মাশরুম একটি স্পর্শকাতর ছত্রাক জাতীয় সব্জী। মাশরুম চাষ ঘরের চারপাশ সবসময় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে স্যাভলন বা ফিনাইল দিয়ে ঘর পরিস্কার করে নিতে হবে। ঘরে ঢুকতে হলে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় চোপড় পরে ঢুকতে হবে। যে ঘরে মাশরুম চাষ করা হবে সেখানে নিয়মিত সকাল বিকাল প্রয়োজনমত পরিমাণমত পানি স্প্রে করতে হবে। স্পোন প্যাকেটগুলি এমন ভাবে রাখতে হবে যাতে যাতে একটি অন্যটির গায়ে না লাগে। মাশরুম গায়ের শিরাগুলি ঢিলা হয়ে গেলে পানি স্প্রে করা যাবে না। গরমের দিনে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঘরের মেঝে এবং দেয়ালে স্প্রে মেশিন দিয়ে বৃষ্টির মত কয়েকবার ভিজিয়ে দিতে হবে। যদি সম্ভব হয় তবে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রন করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে প্যান বেশিক্ষ না চলে এতে স্পোন বা মাশরুম শুকিয়ে যাবে। যদি কোন কারণে বেশি শুকিয়ে যায় তবে সাথে সাথে পানি স্প্রে করতে হবে। মাশরুমের আকার সুন্দর রাখতে চাইলে ৩-৪ দিন পর অতিরিক্ত অংকুর ধারালো ব্লেড দিয়ে প্রোনিং করে দিতে হবে। মাশরুম তোলা ১২ ঘন্টা পূর্বে পানি স্প্রে করা যাবে না। মাশরুমের সাধারণত: কোন প্রকার পোকা মাকড় বা রোগ বালাই নাই। তবে মাঝে মধ্যে তেলাপোকা, মাছি বা ইঁদুর মাশরুমের ক্ষতি করে।

সংকলন : কৃষিবিদ মোহাইমিন। 

 

- Advertisement -

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.