- Advertisement -
চৈত্র মাসের কৃষি
কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ
ফাল্গুনের পরই আগমন ঘটে বাংলা বছরের শেষ মাস চৈত্র। প্রিয় কৃষিজীবী শ্রোতা ভাই ও বোনেরা, চৈতালী শুভেচ্ছা, কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন, সুস্থ্য আছেন। বসন্তের এ মাসে বাংলার প্রকৃতি আস্তে আস্তে উত্তপ্ত হতে থাকে। বেড়ে ওঠা তাপদাহের পাশাপশি চৈতালী হাওয়া কখনো কখনো কনকনে ঠান্ডা হয়ে বয়ে চলে। এরকম বিচিত্র আবহাওয়ার সাথে কোকিলের সুমধুর কন্ঠস্বর ঋতুরাজ বসন্তের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মোট কথা আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে চৈত্র আসে বাংলা বছরকে বিদায় জানাতে। তবে গ্রামীণ জীবনে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মেলার পসরা বসে চৈত্র মাসে। তাই গ্রামীণ সমাজে চৈত্র মাসের গুরুত্ব অন্যরকম। এবার এ সময়ের কৃষিতে করণীয় কাজ সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু জেনে নেব।
আপনার যেসব জমিতে বোরো ধানের চারা সময়মত রোপণ করা হয়েছে সেসব জমিতে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ শেষ হওয়ার কথা। তবে যারা দেড়িতে চারা রোপণ করেছেন তাদের জমিতে চারার বয়স ৫০-৫৫ দিন হলে উইরিয়া সারের শেষ উপরি প্রয়োগ করতে পারেন। এসময় ধানের জমিতে ক্ষতিকর পোকা ও রোগের আক্রমণ হতে পারে এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে। জমিতে ডাল বা বাঁশের কঞ্চি পুঁতে দিয়ে পাখি বসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাছাড়া আলোর ফাঁদ ব্যবহার করেও ক্ষতিকর পেকা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে উপকারী পোকা ও প্রাণী সংরক্ষণ করতে হবে তারা ক্ষতিকর পোকা খেয়ে আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। পোকা ও রোগ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে উপসহকারী কৃষি অফিসার বা উপজেলা কৃষি অফিসার বা অভিজ্ঞ চাষির পরামর্শ নিতে পারেন।
আপনার জমিতে যদি দেরি করে গম বপন করে থাকেন তবে তা পেকে গেলে তাড়াতাড়ি করে কেটে মাড়াই, ঝাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে পারেন। কারণ যে কোন সময় বৃষ্টিতে পাকা গমের বেশ ক্ষতি হতে পারে। গমের শুকনো বীজ ছায়ায় ঠান্ডা করে সংরক্ষনের ব্যবস্থা করতে হবে।
যে জমিতে ভূট্টা বপন করেছিলেন তা যদি পেকে যায় তবে সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে পারেন। ভূট্টা গাছ জমি থেকে তুলে ভালো করে শুকিয়ে নিতে পারেন। এগুলো জ্বালানী এবং গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাবদিপশুকে খাওয়ানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। আপনি গ্রীষ্মকালীন ভূট্টা চাষ করতে চাইলে এখনই বীজ বপন করতে পারেন।
গ্রীষ্মকালে শাকসবজি চাষ করতে হলে এখনই বপন বা চারা রোপণ শুরু করতে হবে। এজন্য জমি তৈরি, মাদা তৈরি, সার প্রয়োগের কাজ এখনই করতে হবে। গ্রীষ্মকালে যে সব সবজি চাষ করা যায় সেগুলো হলো গ্রীষ্মকালীন টমেটো, ঢেঁড়স, বেগুন, করলা, চিচিঙা, শসা, ওলকচু, পটোল, কাঁকরোল, মিষ্টি কুমড়া, চালকুমড়া, লালশাক, পুঁইশাক, কলমি শাক, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ এসব।
নানা কারণে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। জমিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। আবার জৈব সার পর্যাপ্ত পরিমাণে আমাদের হাতে নেই। এ অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আপনার জমিতে সবুজ সার ফসল চাষ করে জৈব পদার্থের পরিমাণ বাড়াতে পারেন। ধৈঞ্চা, শনপাট, বরবটি, মাসকলাই, ছোলা, অড়হর চাষ করার এখনই উপযুক্ত সময়। আর এ গুলি হলো সবুজ সার তৈরির ফসল। সবুজ সার মাটির সাথে মেশানোর ৮-১০ দিনের মধ্যেই পরবর্তী ফসল চাষ করা যাবে।
চৈত্র মাসে বেশ গরম পড়ে। সেজন্য গবাদিপশুর এ সময় বিশ্রামের প্রয়োজন। আপনার গবাদিপশুকে ছায়ায় রাখার এবং বেশি বেশি পানি খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে নিয়মিত গোসল করার ব্যবস্থাও করতে হবে। এছাড়া এ সময়ে গবাদিপশুর গলাফুলা, তড়কা, বাদলা এবং মুরগির রাণীক্ষেত, হাঁস-মুরগির কলেরা রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেণ।
মাছের আঁতুড় পুকুর তৈরির কাজ এ সময় শেষ করা দরকার। পুকুরের মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে জাল টানার ব্যবস্থা নিতে হবে। মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য পরিমিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। মাছের রোগ হলে তা সারাতে মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিনিয়ত আমাদের কৃষিতে সমস্যা। তাই কৃষি বিষয়ক যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার সম্পর্কে জানতে আপনার নিকটস্থ উপসহকারী কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করুন। বাংলা বছরের শেষ প্রান্তে দাড়িয়ে আপনার কৃষি কার্যক্রম সফল হোক এই প্রত্যাসায় এ মাসের কৃষি এখানেই শেষ করছি। কৃষিতে আপনার সমৃদ্ধি মানেই দেশের সমৃদ্ধি সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা।
- Advertisement -
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.