- Advertisement -

কোরবানির পশুতে স্টেরয়ড বা হরমোন : সচেতন হোন

কোরবানির পশুতে স্টেরয়ড বা হরমোন : সচেতন হোন

298

- Advertisement -

কোরবানির পশুতে স্টেরয়ড বা হরমোন : সচেতন হোন

কৃষিবিদ মোহাইমিনুর রশিদ

ইসলামে নির্দেশনা রয়েছে মোটাতাজা সুন্দর পশু কোরবানি করার। তাই আমরা মোটাতাজা পশু কোরবানি করতে উৎসাহিত বোধ করি। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ঈদের আগে অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেকেই বিভিন্ন অনৈতিক পন্থায় পশু মোটাতাজা করে থাকে। এক্ষেত্রে গ্রোথ হরমোনের ব্যবহার, ট্যাবলেট ও স্টেরয়েডসহ নানা ধরনের বিষাক্ত ইনজেকশন ব্যবহার করে গবাদিপ্রাণিকে মোটাতাজা করে থাকে। এটা একেবারেই নিষিদ্ধ এবং অত্যন্ত গর্হিত কাজ। মৎস্য ও পশুসম্পদ আইন ২০১০ মোতাবেক পশুকে অ্যান্টিবায়োটিক বা ক্ষতিকর স্টেরয়েড খাওয়ানো যাবে না এবং দন্ডনীয় অপরাধ।

অধিক মুনাফা লাভের জন্য অনেক খামারিরা কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অনৈতিকভাবে পশু মোটাতাজা করে থাকে। প্রতি বছরই কৃত্রিমভাবে পশু মোটাতাজাকরণের জন্য এক শ্রেণীর খামারি ঈদের কিছুদিন আগে রোগাক্রান্ত ও শীর্ণকায় পশু অল্প টাকায় কিনে স্টেরয়েড বড়ি, ইউরিয়া ও নিষিদ্ধ পাম বড়িসহ বিভিন্ন ওষুধ খাওয়ানো এবং স্টেরয়েড ইঞ্জেকশন প্রয়োগের মাধ্যমে পশু মোটাতাজা করে। এসব গ্রোথ হরমোন ব্যবহারের ফলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই পশুর ওজন বেড়ে যায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে পশুকে দেখতে মোটাতাজা ও শরীরে মাংসের পরিমান বৃদ্ধি পায় বলে মনে হয়। অথচ এসব স্টেরয়েড ওষুধ ব্যবহারের নানাবিধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। দীর্ঘদিন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারে প্রাণীটির স্বাস্থ্য ঝুঁকির পাশাপাশি এ ধরনের মাংস খাওয়া মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ও ক্ষতিকর। স্টেরয়েড ব্যবহারে প্রাণীর শরীরে ড্রামাটিক পরিবর্তন আসে যেমন দেহের আয়তন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। দেহের চর্বি কোষগুলো বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে পশুর হৃৎপিন্ড, কিডনি, অগ্নাশয় ও যকৃৎ মারাত্নক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় এসব ওষুধ সেবনে পশুর হার্ট এ্যাটাক হয়ে মারাও যেতে পারে। এই জাতীয় পশুর গোশত যদি মানুষ নিয়মিত গ্রহণ করেন, তাহলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগের আর্বিভাব ঘটে যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এমনকি ব্রেন স্ট্রোকও হতে পারে।

হরমোন ব্যবহৃত পশু চেনার উপায়
গ্রোথ হরমোন বা স্টেরয়েড ব্যবহৃত পশুর শরীরে পানি জমে মোটা হয়ে যায়, পানি জমে থাকা থলের মতো থলথল করে। এসব পশুর পেছনের দিকে ঊরুর পেশীবহুল জায়গায় আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিলে তা কিছুটা দেবে যাবে। তুলনামুলকভাবে এসব পশুর পাগুলো অনেক পাতলা বা শুকনো মনে হয়। পশুগুলো অস্বাভাবিক মোটা হয়, শারীরিকভাবে দুর্বল থাকে, ও অসুস্থ থাকে। ফলে সবসময় নীরব ও নির্জীব থাকে, নড়াচড়া কম করে। তাছাড়া ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারে না, এমনকি খাবারও খেতে চায় না। পক্ষান্তরে পশু সুস্থ পশু চেনার সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য হলো মাথা তথা শিরদাড়া উঁচু, কান খাঁড়া, শরীর টানটান থাকবে। পশুগুলোর মধ্যে প্রাণোচ্ছ্বল ও প্রাণচাঞ্চল্যপূর্ণ চটপটে ভাব থাকবে, দ্রত হাঁটাচলা ও স্বাভাবিকভাবে খাওয়া-দাওয়া করবে। ভারি আওয়াজে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকবে এমনকি গুঁতো দিতেও উদ্যত হবে। পশুর মুখের সামনে কিছু খাবার বা ঘাস দিলে নিজ থেকেই জিব দিয়ে টেনে নিয়ে খাবার খেতে থাকে তাহলে পশুটি সুুস্থ। সুস্থ সবল পশুরা লেজ নাড়িয়ে শরীরের মাছি তাড়ায়। এক স্থানে স্থির হয়ে দাড়িয়ে থাকতে চায় না, কান নাড়াচাড়া করে, পশুর কাছে গেলে অনেক সময় গুতা দেওয়ার চেষ্টা করে, সুস্থ পশুর নাকের উপরটা ভেজা ভেজা থাকে।

মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০ এর ১৪-এর এক উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘মৎস্যখাদ্য ও পশুখাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক, গ্রোথ হরমোন, স্টেরয়েড ও কীটনাশকসহ অন্যান্য ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যাইবে না।’ আর ১৪ এর দুই উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এই ধরনের স্টেরয়েড জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আর এই আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে, এ ধারার অপরাধ প্রমাণিত হলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থ দন্ডে দন্ডিত হবেন।
মোদ্দাকথা আপনার অতি আদরের প্রাণিটি অনেক মূল্যবান সম্পদ। অল্পকিছু লাভের আশায় এ হীন কাজ করলে প্রাণিটি মারা যেতে পারে। তাছাড়া স্টেরয়েড ব্যবহৃত প্রাণির মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে আইনের আওতায় দন্ডিত হলে পারিবারিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে হেয়পন্ন হবেন। তাই আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সাধারণত খড়, তাজা ঘাস, খৈল ও ভুষিসহ পুষ্টিকর খাবার দিয়ে কোরবানির পশুকে হৃষ্টপুষ্ট করুন।

 

- Advertisement -

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.