- Advertisement -
কাঁঠালের গ্রাফটিং পদ্ধতি
কৃষিবিদ মোহাইমিন
কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে কাঁঠাল অন্যতম। তাছাড়া একে শক্তিমান ফলও বলা হয়। যেমন তার আকার আকৃতি তেমনি তার পুষ্টিগুণ। কাঁঠলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম ও যথেষ্ট পরিমাণে শর্করা রয়েছে। এ ছাড়া বীজে রয়েছে যথেষ্ট আমিষ, আঁশ ও শর্করা। এ ফলটি পৃথিবীর বৃহত্তম ফল, ফলটির বিশেষত্ব হচ্ছে এর কোন অংশ ফেলনা নয়। এর ফল ও বীজ যেমন আমাদের উপাদেয় খাবার তেমন এর ছোবরাও গবাদিপশুর উপাদেয় খাবার। আর কাঁঠাল গাছের মূল কাঠ তো রয়েছেই। সুতরাং কাঁঠাল আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান পুষ্টির অভাব পূরণে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।
কাঁঠাল ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বর্তমান দেশি- বিদেশী এবং বারোমাসি কাঁঠাল আবাদ বৃদ্ধির তাগিদ রয়েছে। আমাদের দেশে কাঁঠাল সাধারনত বীজ থেকে চারা তৈরি করে চাষাবাদ করা হয়ে থাকে।
কাঁঠালের কলম করার পদ্ধতি
গ্রাফ্টিং-এর মাধ্যমে কাঁঠালের জাত উন্নয়ন করা সম্ভব। আমাদের দেশে আনাচে কানাচে মিষ্টি ও গুণেমানে সমৃদ্ধ কাঁঠালের অনেক জাত রয়েছে। এগুলো থেকে গ্রাফ্টিং এর মাধ্যমে উন্নত চারা তৈরি করা হলে খুব সহজেই উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব। আধুনিক পদ্ধতিতে পার্শ্বজোড় কলম পদ্ধতির মাধ্যমে কাঁঠালের গ্রাফ্টিং করার কাজ খুব সহজেই করা যায়। এর সম্প্রসারণ করা হলে উন্নত মানের কাঁঠাল উৎপাদন খুব সহজ।
গ্রাফ্টিং এর সুবিধা বীজের চারায় মাতৃগাছের আসল গুণাগুণ সবসময় বজায় থাকে না। অথচ গ্রাফ্টিং এর মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হলে পূর্বের গাছের প্রায় সব গুণাগুণই ঠিক থাকে। গ্রাফটিং এর মাধ্যম্যে কোন একটি গাছের জাতের বৈশিষ্টের সাথে অন্য একটি জাতের গাছের বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় করা হয়। যেমন ধরা যাক, কোন একটি কাঁঠাল গাছের আকৃতি খাটো, সতেজ আবার রোগ বালাইও কম কিন্তু এর ফলন ভালো নয়, ফলের মিষ্টতাও কম। আবার অন্য একটি কাঁঠাল গাছের হয়তো ফলন ও মিষ্টতা দুই’ই ভালো কিন্তু গাছটি তেমন সতেজ নয় এবং রোগবালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা কম। এ ক্ষেত্রে এ দু’টি গাছের মধ্যে গ্রাফটিং করা হলে দু’টি গাছের বৈশিষ্ট্য মিলে একটি কাঙ্খিত গুণাবলীর কাঁঠাল গাছ পাওয়া যাবে।
দু’টি উপায়ে গাছের বংশবিস্তার করা যায়। একটি হলো বীজ থেকে চারা তৈরি করে অন্যটি হলো কলম কেটে চারা উৎপাদন করে। কলম তৈরির এই কৌশলকে ‘গ্রাফ্টিং’ বলা হয়ে থাকে।
গ্রাফ্টিং এর জন্য অনুন্নত ছোট একটি চারা গাছের কান্ডের সাথে উন্নত জাতের একটি গাছের কান্ডের অংশ এমনভাবে জোড়া লাগানো হয় যাতে পরবর্তীতে জোড়া লাগা কান্ডের অংশটিই বেড়ে পূর্ণাঙ্গ একটি গাছে পরিণত হবে। এ ধরনের গাছ থেকে কাঙ্খিত মানের ফল পাওয়া যায়। শ্রাবণ- ভাদ্র মাস গ্রাফ্টিং এর উপযুক্ত সময়। কারণ এ সময়ে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমান বেশি থাকে। যা কলম জোড়া লাগার ক্ষেত্রে সহায়ক। গ্রাফ্টিং এর জন্য প্রথমে স্টক গাছ তৈরি করতে হবে। যে অনুন্নত গাছকে অবলম্বন করে বা যে গাছের কান্ডে উন্নত ডালা জোড়া লাগানো হবে তাই হলো স্টক গাছ। স্টক তৈরির জন্য প্রথমে যে কোন ধরণের পরিপক্ক কাঠালের ফল থেকে পরিপুষ্ট বীজ সংগ্রহ করে চারা তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি পলি ব্যাগ বা টবে একটি করে কাঁঠালের বীজ বপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে ভিটি বালুর সাথে অর্ধেক পচা গোবর সার বা আবর্জনা পচা সার মিশিয়ে নিতে হবে। সার মিশ্রিত মাটি দিয়ে পলিব্যাগ বা টব ভর্তি করতে হবে। বীজ লাগানোর ৭-১০ দিন পর চারা গজাতে শুরু করে। ২ সপ্তাহ পর একটি স্টক গাছে অর্থাৎ কলম করার উপযোগী গাছে পরিণত হয়। স্টক গাছের চারাটি সোজা ও সবল হলে ভাল।
সায়ন নির্বাচন উৎকৃষ্ট ও কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন কাঁঠাল গাছ থেকে নির্দিষ্ট বয়সী ও আকৃতির ডালা কেটে সংগ্রহ করতে হবে। একেই সায়ন বলে। নতুন বের হওয়া শাখা যাদের বয়স দু’মাসের বেশি নয় এবং শাখার আকারও প্রায় স্টক চারার সমান এমন শাখা বা ডালা সায়ন হিসেবে সংগ্রহ করতে হবে। সায়ন যদি দূর থেকে আনতে হয় তবে পানিদিয়ে ভিজিয়ে আনতে হবে। নির্বাচিত সায়ন ডালা কুঁড়িসহ কেটে আনতে হবে। সায়নের অগ্রভাগের সুপ্ত কুঁড়ি বাদে বোঁটাসহ অন্য পাতা কেটে ফেলতে হবে। সায়নের দৈর্ঘ্য ৪-৬ ইঞ্চি হতে হবে।
কলম জোড়া লাগানো প্রথমে স্টক গাছ হিসেবে নির্বাচিত চারার গোড়া থেকে ২-২.৫ ইঞ্চি উপরে ধারলো ব্লেড বা বাডিং ছুরি দিয়ে তেরসাভাবে ডালাটি কাটতে হবে। ঠিক একই সময় সায়ন ডালার গোড়ার দিকে ১ ইঞ্চি পরিমাণ অংশ উভয় দিক দিয়ে তেরসা করে ধারালো ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কাটতে হবে। এবার কাটা সায়ন ডালাটির তেরসা অংশ পার্শ্বজোড় কলম পদ্ধতিতে স্টকের তেরসা অংশের মধ্যে ভালোভাবে ঢুকিয়ে গ্রাফ্টিং ক্লিপ বা পলিথিন ফিতা দিয়ে সংযোগ স্থানটি ভালো ভাবে বেঁধে দিতে হবে। কলম শেষ হয়ে গেল। কলম শেষ করার পর টব বা পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে সরিয়ে রাখতে হবে এবং পলিথিন ব্যাগ দিয়ে গ্রাফ্ট করা গাছগুলো ঢেকে রাখতে হবে। কলম করা চারাগুলো যাতে শুকিয়ে না যায় সেজন্য প্রতিদিন ২-৩ বার পলিথিনের উপর পিচকারী দিয়ে পানি স্প্রে করতে হবে যাতে পলিথিন ব্যাগের ভিতরের আর্দ্রতা বেড়ে যায়। এভাবে ৬-৭ দিন পর্যন্ত পানি স্প্রে করা ভালো। পলিথিনের ভিতরের তাপমাত্রা বাড়া যাবে না। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পলিথিন ব্যাগ খুলে দিতে হবে যাতে তাপ কমে যায়। বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা না থাকলে রাতে পলিথিন খুলে রাখা ভালো। গ্রাফ্ট সম্পন্ন করার পর ঠিকমত পরিচর্যা করা হলে ২-৩ মাস পর চারাটি রোপনের উপযোগী হয়।
- Advertisement -
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.